মহানবীর জীবনী পড়ে মুসলিম হওয়া এক ব্রিটিশ যুবকের গল্প

তাঁর নাম ইউসুফ ডার্বিশায়ার, যুক্তরাজ্যের অধিবাসী। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন মদ-মাস্তিতে মগ্ন এক ব্রিটিশ যুবক। কিন্তু এর মাঝেই তিনি পড়তে শুরু করেন মুহাম্মাদের জীবনী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

অবসর সময়ে তিনি নবী মুহাম্মাদের জীবনী পড়তেন। এভাবে মহানবীর জীবনী পড়তে পড়তে ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। এক সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।

মহানবীর চাচা হামজা’র জীবন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। ফলে তার বোনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের মেয়ের নাম রাখেন সাফিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে প্রচারিত ইউসুফ ডার্বিশায়ারের ইসলাম গ্রহণ বিষয়ক সাক্ষাৎকারের লেখ্যরূপ তুলে ধরা হল –

মহানবীর জীবনী পড়ে মুসলিম হই : মুসলিম হওয়ার আগে আমি ছিলাম একজন সাধারণ ব্রিটিশ বালক। আমি রবিবার সন্ধ্যায় মদপানসহ এমন সবকিছুতেই অভ্যস্ত ছিলাম। পাঁচ বছর আগে আমি ছুটি কাটাতে গ্রিসে যাচ্ছিলাম। আপনি যখন কোনও এয়ারপোর্টে যাবেন আপনার ব্যাকপ্যাকে পড়ার মতো একাধিক বই থাকতে পারে—যা আপনি কোনও সুইমিংপুলের পাশে বসে পড়তে পারেন। যদিও খুব বেশি পড়া হয় না। আমি ভাবলাম, ডাব্লিউএইচ স্মিথের কোনও বই পড়ার জন্যে নিয়ে যাব। কিন্তু মনের মতো কোনও বই পেলাম না।

কখনও কখনও মানুষ না চাইতেও অনেক ভালো কিছু পেয়ে যায়। বই না পেয়ে ফিরে আসার সময় আমার হাতে লেগে একটি বুক শেলফ পড়ে যায়। বইগুলো তোলার সময় তার একটি বই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বার্নাবি রজার্সনের ‘দ্য প্রফেট মুহাম্মদ : আ বায়োগ্রাফি’। লাইব্রেরিতে বইটির প্রথম পৃষ্ঠা পড়ার পরই আমার ভালো লেগে যায়। আমি দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়ি এবং ছুটিতে পড়ার জন্য বইটি কিনে নিই। আমি বইটি পড়লাম। আমার মনে হলো, আমার আরও জানা প্রয়োজন। সুতরাং আমি স্থানীয় একটি মসজিদে গেলাম, তাদের সঙ্গে কথা বললাম এবং জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। মসজিদের ইমাম বললেন, “সত্যি বলতে কি ইসলাম বোঝার শ্রেষ্ঠ পথ হল মুসলিম হওয়া।” তখন আমি দ্বিতীয় কোনও চিন্তা না করেই ‘শাহাদাহ্‌’ পাঠ করলাম।

হামজার জন্যে ভালোবাসা : একজন নওমুসলিম হিসেবে মহানবীর সাহাবিদের সঙ্গে নিজের মিল খোঁজা স্বাভাবিক। কেননা তারাও ছিলেন ‘ধর্মান্তরিত মুসলিম’। আমার মনে হয়, রাসুলুল্লাহ্‌র চাচা হামজার সঙ্গে আমার মিল রয়েছে। ইসলাম গ্রহণের আগে ও পরে তাঁর জীবনাচারের সঙ্গে আমি নিজের মিল খুঁজে পাই। যেমন তিনি আনন্দময় সময় কাটাতে পছন্দ করতেন—এমন অনেককিছুই মনে হয় মিলে যায়। সুতরাং হজের সময় আমি উহুদ যুদ্ধের প্রান্তরে—যেখানে হামজা (রা.) শহীদ হয়েছিলেন সেখানে যাই এবং সময় কাটাই। উহুদের প্রান্তরে আমি যখন হাঁটছিলাম, যেন প্রশান্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদছিলাম। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। আমি হাঁটতে হাঁটতে সামান্য উঁচু করে দেওয়া কবরস্থানের প্রাচীরের কাছে পৌঁছে গেলাম এবং হামজা সহ উহুদের শহীদদের জন্যে দোয়া করলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাসে ফিরে এলাম।

একজন জানতে চাইলেন কী হয়েছে? আমি বললাম, এখানে এমন একজন ছিলেন যার ভেতর আমি আমার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।

তিনি বললেন, “মুহাম্মাদ (সা.) যখন জানতে পারলেন তার চাচার সঙ্গে কী হয়েছে—তিনি কেঁদে দিলেন এবং অবিরাম তার অশ্রু ঝরছিল।”

আমি বললাম, তিনি হয়তো পরবর্তীদের জন্যে কিছু রেখে গেছেন!

সৌজন্যে : bd-pratidin.com, ৩০ মে, ২০২০

 22,561 total views,  19 views today


মন্তব্য (০ টি)

মন্তব্য করুন