মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ।।
ক্যামেরুন মধ্য আফ্রিকার একটি দেশ। এর পশ্চিমে নাইজেরিয়া, উত্তর-পূর্বে চাদ প্রজাতন্ত্র, পূর্বে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও ইকুয়াটরিয়াল গিনি, গ্যাবন, দক্ষিণে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র। ক্যামেরুন দুই শতাধিক ভাষাভাষী গোষ্ঠীর বাসস্থান। বৈচিত্র্যের কারণেই এটি ‘আফ্রিকার খুদে রূপ’ হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলোতে তার মধ্যে ক্যামেরুন অন্যতম। তবে দুর্নীতির কারণে এর অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দুটি ঔপনিবেশিক অঞ্চল একত্র হয়ে ১৯৬১ সালে ক্যামেরুন গঠিত হয়। এখনো শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ক্যামেরুন।
দেশটির পুরো নাম ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্র। রাজধানী ইয়াউন্দে। সরকারি ভাষা ফরাসি, ইংরেজি, বিভিন্ন ও জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা। প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী খ্রিস্টান, মুসলমান, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি
দেশটি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কফি, কোকো, তুলা, কলা ও তৈলবীজ উৎপাদনে ক্যামেরুন বিখ্যাত। এ দেশে অবস্থিত মাউন্ট ক্যামেরুন পশ্চিম আফ্রিকার উচ্চতম পর্বত। দেশটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এক হাজার ২৮ সেন্টিমিটার। কাজেই এটি পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল স্থানের একটি।
ক্যামেরুন ১০টি প্রদেশে বিভক্ত। এটি একটি গরিব রাষ্ট্র। দেশের ৩০ শতাংশ অধিবাসীকে দৈনিক ১.২৫ ডলারের কম অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী হলেও অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বেশ কম।
ক্যামেরুনের আয়তন চার লাখ ৭৫ হাজার ৪৪২ বর্গকিলোমিটার বা এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৯ বর্গমাইল।
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, জনসংখ্যা দুই কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩২ জন। দেশের অধিবাসীদের ক্যামেরুনিয়ান বলা হয়।
যেভাবে ইসলামে আগমন
১৮০০ শতকে ক্যামেরুনে মুসলিম বণিক ও সুফি-ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটে। বর্তমানেও ক্যামেরুনের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ সুফি মতবাদে বিশ্বাসী। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম যাযাবর জনগাষ্ঠী ‘ফোলানি জাতি’ ১৯ শতকের গোড়ার দিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও সুফি মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে বসবাস করতে শুরু করে।
ফুটবল দলের সব সদস্যের একযোগে ইসলাম গ্রহণ!
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যামেরুনের তরুণ ফুটবল দলের প্রায় সব সদস্যই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, ইসলামে ‘শান্তি ও প্রশান্তি’ খুঁজে পেয়ে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ক্যামেরুনের ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ওই টিমটি দুই মাস ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। দুবাইয়ের একটি ফুটবল একাডেমি দরিদ্র, গৃহহীন ও অনাথ তরুণদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তারাই এসব তরুণ ফুটবলারকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। দুবাইয়ের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড চ্যারিটেবল অ্যাকটিভিটিজ বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই তাঁরা ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। (গালফনিউজ)
মুসলমানদের অবস্থা
ক্যামেরুনে মুসলমানদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আল মুসলিম ডটনেটের তথ্য মতে, দেশটিতে মুসলিম সংখ্যা মোট অধিবাসীর ২৪ শতাংশ। সিআইএর দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, ক্যামেরুনে মুসলিম জনসংখ্যা মোট অধিবাসীর ২০.৯ শতাংশ।
তবে অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে ক্যামেরুনের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম।
ক্যামেরুনের মুসলিম শিশুদের মধ্যে কোরআনচর্চার বেশ আগ্রহ দেখা যায়। জুমার দিন বিভিন্ন মসজিদে কোরআনের কপি বিতরণ করা হয়। সেখানে মুসলিমদের জন্য ৫০টি প্রাথমিক ও পাঁচটি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে এবং প্রায় ৯০টি মসজিদ রয়েছে।
ক্যামেরুনের মুসলিমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী তথা সুন্নি মুসলিম। ক্যামেরুনের মুসলমানরা বেশির ভাগ আফ্রিকান দেশে বাণিজ্য এবং নিজস্ব ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। ক্যামেরুন আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর মতো নয়, ক্যামেরুনিয়ান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার বিধান রয়েছে এবং সরকার সাধারণত এই অধিকারকে সম্মান করে। তবে মুসলিমদের মধ্যে কিছু বিভক্তিও দেখা যায়। বলা যায়, ভালো-মন্দ নিয়েই বেঁচে আছে ক্যামেরুনের মুসলিমরা।
সৌজন্যে : KALERKANTHO.COM, ২২ নভেম্বর, ২০১৯
23,759 total views, 21 views today
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
মন্তব্য (০ টি)