মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ ।।
আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল হযরত ঈসা (আ.) যে বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস প্রচার করে বিদায় নিয়েছেন, তাকে জলাঞ্জলি দেয়ার মতলবে অসাধু পল আগেই আদি পাপের বানোয়াট বিশ্বাস (Doctrine of Original Sin) এবং ত্রিত্ববাদের মিথ্যা তত্ত্ব (Doctrine of Trinity) ঠিক করেছেন। এরপর তিনি তৃতীয় একটি মনগড়া মতবাদ ‘প্রায়শ্চিত্তবাদ’ (Doctrine of Atonement)’ প্রচার করেন।
এই মতবাদে তিনি বলেন যে, আদি পিতামাতা আদম-হাওয়া (আলাইহিমুস সালাম) নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে তাঁদের পরবর্তী বংশধর মানবজাতি সহ পাপী হয়ে আযাবের উপযুক্ত হয়ে গেছেন; না’ঊযুবিল্লাহ্। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা মানবজাতিকে ভালোবেসে তাদেরকে সেই আযাব থেকে উদ্ধার করতে নিজেই এর প্রায়শ্চিত্ত করার সিদ্ধান্ত নেন; না’ঊযুবিল্লাহ্। তাই তিনি নিজের পুত্র হয়ে নিজেই পৃথিবীতে ঈসা নামে আগমন করেন; না’ঊযুবিল্লাহ্। এরপর তিনি মানবজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ অত্যাচারী ইহুদিদের হাতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুবরণ করেন; না’ঊযুবিল্লাহ্। পল বলেন যে, কোনো ব্যক্তি যদি তার এসব কথায় বিশ্বাস করেন, তবেই তিনি ‘খ্রিস্টান’ হিসেবে গণ্য হবেন এবং ‘বেহেশতে অনন্ত জীবন যাপন করবেন’।
অথচ, যেকেউ খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন পল-দাবিকৃত খ্রিস্টবাদের এই তিন মূল প্রচারণা কতোটা অন্তঃসারশূন্য!
প্রথম কথা, নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পরপরই অনুতপ্ত হয়ে আদম-হাওয়া তওবা করেন এবং মহান আল্লাহ্ সেই তওবা কবুলও করেন। এরপর কেন তাঁরা পাপী বলে গণ্য হবেন?
দ্বিতীয় কথা, আদম-হাওয়া যদি পাপীও হতেন, তবু তাঁদের পাপে তাঁদের বংশধর শিশুমাত্রকে পাপী বলে ধরে নেয়া কতটা সুবিচার?
তৃতীয় কথা, পাপ করবে মানুষ, আর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন আল্লাহ্ বা আল্লাহ্র ‘নিষ্পাপ পুত্র’ বা নবী; এটা কেমন সুবিচার?
চতুর্থ কথা, মহান আল্লাহ্ আদম-হাওয়াকে ভালোবেসে তাদের তওবা কেন কবুল করতে পারবেন না? তাদেরকে সরাসরি ক্ষমা না করে কেন নিজে তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার দায়িত্ব নিবেন?
পঞ্চম কথা, আল্লাহ্ নিহত হয়েছেন বা আল্লাহ্কে হত্যা করা হয়েছে (না’ঊযুবিল্লাহ্), এমন কথা প্রচার করার আস্পর্ধাই কি খ্রিস্টানদের কাফির হওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়? মৃত্যু দূরের কথা, নিদ্রা বা তন্দ্রাওতো আল্লাহ্কে স্পর্শ করে না! আর এমন হলে বিশ্ব টিকে থাকে কিভাবে?
ষষ্ঠ কথা, পাপী মানুষ কেন তওবা না করেও ‘আল্লাহ্র প্রায়শ্চিত্তের’ সুবিধা ভোগ করবে? অব্যাহত পাপ করে দুনিয়াতে নিজেরা কষ্ট পাবে, সবাইকে কষ্ট দিবে, আর মৃত্যুর পর বেহেশতে অনন্ত জীবন লাভ করবে?
বরং শুধুমাত্র ঈমান এবং মহান আল্লাহ্র বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার মাধ্যমেই মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি লাভ করতে পারবে। পৃথিবীতে পাঠানোর সময় আদম-হাওয়াকে আল্লাহ্পাকের ইরশাদ,
“যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট কোনো হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” (সূরা বাকারা : আয়াত ৩৮)
সপ্তম কথা, হযরত ঈসা (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হননি, মারাও যাননি। বরং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জীবিত অবস্থায় পৃথিবী থেকে তুলে নিয়েছেন। আল্লাহ্র পবিত্র কালাম,
“তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল।” (সূরা নিসা : আয়াত ১৫৭)
এমতাবস্থায় পলের প্রবর্তিত ও প্রচারিত খ্রিস্টবাদ যে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি শয়তানি ও মানব-স্বার্থবিরোধী ধর্ম, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
100,144 total views, 46 views today
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
মন্তব্য (০ টি)