ডা. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী ।।
আমাদের এক প্রিয় নওমুসলিমা বান্দরবানের পারভিন ত্রিপুরা।
পারভিন মানিকগঞ্জের এক মহিলা মাদরাসায় পড়তো। মা-বাবাও নওমুসলিম। মাদরাসায় পড়ালেখার কারণে পারভিনের তাকওয়া প্রশংসনীয়। কিন্তু বাবা-মা মুসলিম হয়েও ইসলামী সংস্কৃতির চেয়ে ত্রিপুরা সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয় বেশি। তাদের বাড়ি ২০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। পাহাড়ের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণাই সেখানে পানির একমাত্র উৎস। সবাই সেখানে গোসল করে এবং সেখান থেকে খাবার পানি আনে। কিন্তু সে ছুটিতে বাড়িতে আসলে বোরখা পরে ২০০০ ফুট নীচ থেকে কলসি ভরে পানি এনে ঘরে গোসল করতো। পর্দার খেলাফ কাজের চেয়ে মৃত্যু যেন তার কাছে সহজ।
একবার ছুটিতে বাড়িতে এনে বাবা-মা আর তাকে মাদরাসায় যেতে দেয়না। সে যেন বাইরে যেতে না পারে এজন্য বাবা তার বোরখাটা পুড়ে ফেলে। তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। সে শর্ত দেয় পাত্রকে হাফেজ ও আলেম হতে হবে। কিন্তু তারা এক ছেলের সাথে তার অমতে বিয়ে ঠিক করে। সে বুঝতে পারে এই বিয়ে হলে তার ইসলামের ওপর চলা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সে তার এক বান্ধবীর সাথে কথা বলে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে।
ফজরের আগে উঠে বান্ধবীর বোরখা নিয়ে পারভিন বাড়ি থেকে পালায়। আমাদের দা’ঈদের কাছে খবর আসায় সবাই আমরা পেরেশান হয়ে যাই। রাতে খবর এলো সে ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জের মাদরাসায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমরা আশ্বস্ত হই।
সে আর বাড়িতে আসেনা। তার বিয়ের শর্ত হলো হাফেজ ও আলেম। আমরা খুঁজতে থাকি। এরকম পাওয়াও কঠিন। খুঁজতে খুঁজতে আমার খুব পছন্দ হলো আমাদের কক্সবাজার ঈদগাহ কেন্দ্রীয় মসজিদের সানি ইমাম হাফেজ মাওলানা সালামাতুল্লাহ। কিন্তু তিনি কি রাজি হবেন? তাঁর পরিবার কি রাজি হবে? অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব দিলাম। তিনিও হিম্মত করলেন; বান্দরবানের মেয়েকে দেখতে মানিকগঞ্জ গেলেন। দেখলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাজি হলেন। আলেম পরিবারের ছেলে হওয়ায়, বাবা আলেম হওয়ায় রাজি করা সহজ হয়।
বিয়ে ঠিক হয় এবং আমার ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টারের জমিদারের বাড়িতে আয়োজন হয়। কিভাবে সব আয়োজন হয় কল্পনাতীত। মাওলানা মাহমুদ, মাওলানা ইয়াকুব ভাই সহ কক্সবাজার মেডিকেলের ছাত্রদের উপস্থিতিতে ভালো মেহমানদারির মাধ্যমে মোহরে ফাতেমির সর্বোচ্চ মূল্য মোহর ধার্য করে বিয়ে ও রেজেস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
এটা আমাদের প্রথম উপজাতীয় মুসলিম এবং বাঙ্গালী হাফেজ-আলেমের বিয়ে। পারভিন ত্রিপুরাকে তার শ্বশুর মারিয়াম নামে ডাকে। সে তার শ্বশুরবাড়িতে সবার প্রিয় একজন। তাদের এক কন্যা সন্তান হয়েছে।
আর হাফেজ মাওলানা সালামাতুল্লাহ কেন্দ্রীয় মসজিদের দায়িত্ব ছেড়ে ত্রিপুরা মুসলিমদের দীক্ষা প্রদান ও অন্য অমুসলিমদের মধ্যে দাওয়াত, এই দুই মিশন নিয়ে চাকচিক্যময় শহুরে জীবন ত্যাগ করে অরণ্যজীবন গ্রহণ করেছেন। তাঁর আচরণে মুগ্ধ হয়ে অনেকে কালেমার শাহাদাহ দিয়ে ইসলামী জীবন যাপন করছেন। এমনকি অমুসলিমরাও তাঁকে পছন্দ করেন।
তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর দীনদারির প্রশংসা করে ছোট করতে চাইনা। বরং সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে চাই।
14,999 total views, 1 views today
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
মন্তব্য (০ টি)