মূর্তি ও চিত্রপূজার বিরুদ্ধে সনাতন হিন্দুধর্ম

মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ ।।

নিজেকে কোনো বাস্তব বা কল্পিত ঊর্ধতন সত্ত্বার মুখাপেক্ষী জেনে পূজা-উপাসনা করার উদ্দেশ্যে তাঁর অবয়ব, ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরি করা কোনো কোনো ধর্মের বৈশিষ্ট্য।

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে হিন্দুধর্ম অন্যতম। যদিও বাস্তব অনুসন্ধানে নিয়োজিত হলে দেখা যায়, হিন্দুধর্মের অনুসারী বলে পরিচিত মানুষের মধ্যে একেবারে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস, উপাস্য, উপাসনাপদ্ধতি ইত্যাদি বিদ্যমান। তখন মনে হয়, ভিন্ন ভিন্ন কতোগুলো ধর্মকে ভুল করে একটি ধর্ম বলে বর্ণনা করতে গিয়ে ‘হিন্দুধর্ম’ নামটি তৈরি হয়েছে।

এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই বলতে হয়, বর্তমানে যদিও বিপুল সংখ্যক হিন্দু মূর্তির মাধ্যমে বহু দেবতার পূজা করে থাকেন; কিন্তু এটি তাদের প্রকৃত বা মূল ধর্মের বৈশিষ্ট্য নয়। মূল হিন্দুধর্ম আদৌ মূর্তি বা চিত্রপূজাকে সমর্থন করে না।

হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজার অস্বীকৃতি

হিন্দুদেরকে মূর্তিপূজা করতে দেখা যায়। বলা হয়, পুরোহিতেরা মূর্তিতে দেবতার ‘আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার’ পর হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজা করেন। যেমন, স্বামী বিবেকানন্দ মূর্তিপূজা সম্পর্কে হিন্দুধর্মের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে:

“পুতুল পূজা করে না হিন্দু/ কাঠ মাটি দিয়ে গড়া/ মৃণ্ময় মাঝে চিন্ময় হেরে/ হয়ে যাই আত্মহারা।” অর্থাৎ, মাটির মূর্তির ভিতরে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার আগমন ঘটে, এমন বিশ্বাসের কারণেই শুধু হিন্দুরা মূর্তিপূজা করছেন।

কিন্তু এই কথাকে খণ্ডন করে ঠাকুর বালক ব্রহ্মচারী বলেছেন:

“প্রথমদিকে মূর্তি তৈরির পিছনে দেবদেবী, ভগবান, পূজা-পার্বণ ইত্যাদির কোনো নামগন্ধই ছিল না। সেগুলো সব পরে আরোপিত হয়েছে; ধর্মব্যবসায়ীদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, তাদেরই দ্বারা।”

বালক বলেন, “লোকেরা মূর্তি ভালবাসতো পুতুল হিসেবে। মূর্তি দিয়ে ঘর সাজাতো। স্বার্থান্বেষীরা এ সুযোগ ছাড়লো না। তারা এসব মূর্তিকে পূজা করতে আরম্ভ করলো। মূর্তি এবং বেদশ্লোকের অপব্যাখ্যা করে জনসাধারণকে বুঝাতে লাগলো- এগুলো হচ্ছে ভগবানের প্রতিরূপ, বেদজ্ঞ মন্ত্রদ্রষ্টা মুনি-ঋষিরা ধ্যান করে এ মূর্তিগুলো পেয়েছে, এদেরই শক্তিতে জগত চলছে। অতএব এসব মূর্তিকে বিভিন্ন উপচারে পূজা করলে, তাদের ধ্যান করলে ভগবান খুশি হবেন। যদি নিজেদের মঙ্গল চাও, তাহলে এখানে পূজা দাও।

এভাবে লোক আকৃষ্ট করে নিজেদের ব্যবসা চালাতে লাগলো।”

তাহলে জানা গেল, প্রকৃত হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজার কোনো স্থান ছিল না। হিন্দুধর্ম অদৃশ্য ও এক ভগবানের উপাসনার শিক্ষা নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল। একটি স্বার্থান্বেষী মহল জনসমাজের মূর্তিপ্রীতি লক্ষ্য করে ‘মূর্তির ভিতরে ভগবানের অবস্থান’ তত্ত্ব প্রচারের মাধ্যমে প্রথম মূর্তিপূজার সূচনা ঘটায় এবং হিন্দুধর্মের মারাত্মক বিকৃতি সাধন করে।

বালক বলেন, “এভাবেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেবদেবী। মনের ভাবনা-চিন্তা, ধ্যানধারণাকে কেহ প্রকাশ করেছেন রচনায়, কেহ প্রকাশ করেছেন চিত্রে, কেহ মূর্তিতে।”

মূর্তিপূজা কারা কিভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে?

মানুষ যত পার্থিব প্রয়োজন বোধ করে, স্বার্থান্বেষীরা তার প্রতিটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন দেবদেবীর মূর্তিপূজা চালু করেছে। তারা মানুষকে বুঝিয়েছে, প্রতিটি প্রয়োজন পূরণের জন্য এক ভগবানেরই দেবদেবী নামে ভিন্ন ভিন্ন অংশ রয়েছে। তাই বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দেবমূর্তি তৈরি করতে হবে। প্রতিটি মূর্তির ভিতরে পুরোহিতের সাহায্যে দেবতাকে আহ্বান করতে হবে, এরপর পূজা করতে হবে।

কারা কিভাবে মূর্তিপূজার বিস্তার ঘটিয়েছে, সে সম্পর্কে লিখতে গিয়ে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন, “প্রস্তর মূর্তি নির্মাণ করিয়া গুপ্ত কোনো পর্বতে-অরণ্যাদিতে রাখিত। পরে ইহারা চেলাদের মাধ্যমে প্রচার করিত যে, রাত্রিকালে মহাদেব, পার্বতী, রাধাকৃষ্ণ, সীতারাম, লক্ষ্মীনারায়ণ, ভৈরব এবং হনুমান প্রভৃতি তাহাকে স্বপ্নে বলিয়া দিয়াছেন, ‘আমি অমুক স্থানে আছি, আমাকে সে স্থান হইতে আনিয়া মন্দিরে স্থাপন করো এবং তুমি আমার পূজারী হইলে মনোবাঞ্ছিত ফল প্রদান করিব।’

জ্ঞানান্ধ ধন্যাঢ্যগণ এ সকল পোপলীলা সত্য বলিয়া মানিয়া লইতেন এবং জিজ্ঞাসা করিতেন, ‘এখন এই মূর্তি কোথায় আছে?’ তখন পোপ-মহারাজ বলিতেন, ‘অমুক পর্বতে বা অরণ্যে আছে; আমার সঙ্গে চল, দেখাইব।’ তখন জ্ঞানান্ধ সেই ধূর্তের সঙ্গে সে স্থানে যাইয়া মূর্তি দর্শন করিত এবং আশ্চর্য হইয়া তাহার পায়ে পড়িয়া বলিত, ‘আপনার এই দেবতার বড়ই কৃপা; এবার ইহাকে আপনি লইয়া চলুন, আমি মন্দির নির্মাণ করাইয়া দিব। মন্দিরে এই দেবতার স্থাপনা করিয়া আপনিই পূজা করিবেন। আমরাও মনোবাঞ্ছিত ফল লাভ করিব।’

একজনের এইরূপ লীলাখেলা রচনার পর দেখাদেখি অন্যান্য সকল ‘পোপ’ তাহাদের জীবিকার্থে ছলনা-কপটতা সহকারে মূর্তি স্থাপন করিতে লাগিল।”

[মূর্তিপূজা সমীক্ষা, সত্যার্থ প্রকাশ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী; পৃষ্ঠা ২৩৮]

এভাবেই অসংখ্য দেবমূর্তির ভিতরে ভগবানের আগমনের তত্ত্ব দিয়ে একেশ্বরবাদী মূল হিন্দুধর্মকে স্বার্থবাদীদের লোভলালসা চরিতার্থ করার যুপকাষ্ঠে বলি দেওয়া হয়েছে। চিন্তা করে দেখা হয়নি যে, ‘মৃণ্ময় মূর্তির’ ভিতরে যদি ‘চিন্ময় ভগবানেরই’ আবির্ভাব ঘটলো, তবে তাঁকে কেন গরু-ঘোড়া-হাঁস-পেঁচা-ইঁদুরের পিঠে করে আসতে হবে? তাঁকে কেন হাত-পা ধুইয়ে বিভিন্ন ভোগ দিতে হবে? ‘পান-তামুক’ খাওয়াতে হবে? চিন্ময় ভগবানের এসবে কী প্রয়োজন?

মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে হিন্দুধর্মের নিষেধবাণী

হিন্দুদের শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব প্রভৃতি অংশ মূর্তিপূজায় জড়িত। কিন্তু আর্যসমাজ, ব্রাহ্মসমাজ ইত্যাদি অংশ মূর্তিপূজাকে পৌত্তলিকতা আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করে থাকে।

হিন্দুদের প্রধান দুটি ধর্মগ্রন্থ বেদ এবং গীতায় মূর্তিপূজা করতে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং গ্রন্থদুটিতে মূর্তিপূজা থেকে মানুষকে নিষেধ করা হয়েছে।

যেমন যজুর্বেদে বলা হয়েছে, “ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ।” অর্থাৎ, এ পুরুষের প্রতিমা নেই। তার মহৎ যশ আছে।

[যজুর্বেদ, অধ্যায় ৩২, কণ্ডিকা ৩]

ভগবত গীতায় বলা হয়েছে, “কামৈস্তৈস্তৈহৃর্তজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ।” অর্থাৎ, ‘যে ত্বত্যন্তং রাজসাস্তামসাশ্চ কামাভিভূতাঃ ক্ষুদ্রব্দেবতাঃ সেবন্তে।’ (আধুনিক সংস্কৃত অনুবাদ, শ্রীধর স্বামীপাদ)। বাংলায়, ‘যারা অত্যন্ত রাজস বা তামস স্বভাবের লোক, তারাই ইতরাভিলাষের বশীভূত হয়ে ক্ষুদ্র দেবতাগণের সেবা করে।’ (অনুবাদ, ভক্তি সুধাকর)

[শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০]

এ কারণেই সাধারণত শিক্ষিত হিন্দুমহল মূর্তিপূজা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখেন।

মূর্তিপূজারীদের প্রতি নিন্দা

আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মূর্তিপূজারিদের উদ্দেশে বলেন, “যখন তোমরা বেদ-নিষিদ্ধ মূর্তিপূজা প্রভৃতি কাজ কর, তখন তোমরা পাপী হবে না কেন?”

তিনি আরো বলেন, “জড়পূজা দিয়ে মানুষের জ্ঞান কখনও বৃদ্ধি হতে পারেনা, বরং মূর্তিপূজা দিয়ে যে জ্ঞান আছে, তাও নষ্ট হয়ে যায়।” তিনি বলেন, “পাথর-মূর্তির পূজা দিয়ে কেউ কি কখনও পরমেশ্বরকে ধ্যানে আনতে পারে? না না।”

তিনি বলেন, “মূর্তিপূজা উপলক্ষ্যে মানুষ কোটি কোটি টাকা মন্দিরে ব্যয় করে দরিদ্র হয়ে পড়ে।”

স্বামী সরস্বতী বলেন, “দুষ্টবুদ্ধি পূজারীদেরকে যে ধন দেওয়া হয়, তা তারা বেশ্যা, পরস্ত্রীগমন, মদপান, মাংসাহার এবং কলহবিবাদে ব্যয় করে। তাতে দাতার সুখের মূল নষ্ট হয়ে দুঃখ সৃষ্টি করে।”

[মূর্তিপূজা সমীক্ষা, সত্যার্থ প্রকাশ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী; পৃষ্ঠা ২৩৮-২৪৬]

মূর্তি এবং চিত্রপূজা হিন্দুধর্মের নয়

এখন যে হিন্দুরা ব্যাপকভাবে নানা দেবদেবীর মূর্তি ও চিত্রপূজায় লিপ্ত রয়েছেন, এটি মোটেও সূচনাকালীন হিন্দুধর্মের শিক্ষা নয়। আশা করি, উপরের আলোচনা বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে।

 68,170 total views,  34 views today


মন্তব্য (৯ টি)

  • অজ্ঞাতনামা কেউ একজন বলেছেন,

    Jajhakallah, Barakallah; Alhamdulillah

    ডিসেম্বর ১২, ২০২০, ১০:৫০ অপরাহ্ন
  • অজ্ঞাতনামা কেউ একজন বলেছেন,

    Thanks for completing the trilogy.

    ডিসেম্বর ১২, ২০২০, ১০:৫১ অপরাহ্ন
  • অজ্ঞাতনামা কেউ একজন বলেছেন,

    এই রকম আরো লেখা চাই। ইনশাআল্লাহ আরো পাবো।

    ডিসেম্বর ১৬, ২০২০, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
  • Anonymous বলেছেন,

    ১. না তাস্তে প্রতিমা অস্তি মানে ঈশ্বরের কোনো প্রতিমূর্তি নেই।
    জবাবঃ
    না তাস্তে প্রতিমা অস্তি এটা কোনো সম্পূর্ণ শ্লোক নয়। নিজেদের ভন্ডামির সুবিধার্থেই তারা সম্পূর্ণ শ্লোক না দিয়ে আংশিক শ্লোক দিয়ে থাকে। সম্পূর্ণ শ্লোকটি হলোঃ
    ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশঃ ৷
    হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষ যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ৷৷
    [ শুক্ল-যজুর্বেদ ৩২৷৩ ]
    অর্থঃতাঁহার তুলনা বা সাদৃশ্য নাই যাঁহার নামে মহৎ যশ। আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন এখানে প্রতিমা অর্থ মূর্তি হলে কোনোভাবেই অর্থ মিলে না। কারণ মহৎ যশ থাকার সঙ্গে মূর্তি না থাকার কোনো সম্পর্কই নেই। উল্টো আমরা দেখতে পাবো, পৃথিবীতে যারা মহৎ যশ সম্পন্ন ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি, যুগে যুগে তাদেরই বিগ্রহ বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে।
    এখানে প্রতিমা অর্থ হলো তুলনা, মানে ঈশ্বরের তুলনা নেই। যেমন আমরা বলি মাতৃপ্রতিম, মানে মাতৃতুল্য। সংস্কৃত প্রতিমা আর বাংলা প্রতিমা এক নয়।
    ২. যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০ মন্ত্র ৯ এ বলা হয়েছে যারা প্রাকৃতিক বস্তুর পুজা করে তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে, আরো অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা শামবস্তু বা মূর্তির পুজা করে।
    জবাবঃ
    নিজেদের মিথ্যাচার ধরা পড়ে যাবার ভয়ে তারা ১০ ও ১১ নং মন্ত্র এরিয়ে যায়। আসলে সেখানে সম্ভূতি ও অসম্ভূতি নামে দুটো শব্দ আছে। জাকির নায়েকের অনুসারীরা সম্ভুতি এর অর্থ করে মূর্তি বা জড় জিনিসের পূজা আর অসম্ভূতি অর্থ করে প্রকৃতিপূজা। কিন্তু এটা তাদের ধারাবাহিক মিথ্যাচারেরই একটা অংশ। আসলে সম্ভূতি অর্থ সৃষ্টি এবং অসম্ভূতি অর্থ বিনাশ। যেমন আমরা বলি সজ্ঞানসম্ভূত মানে সজ্ঞানে সৃষ্ট। ৯ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, যারা কেবলমাত্র সম্ভূতি বা অসম্ভূতির উপাসনা করে, তারা অন্ধকারে লিপ্ত। ১০ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, এর কারণ এই দুইরকম উপাসনার ফল দুরকম। ১১ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, সম্ভূতি ও বিনাশ (অসম্ভূতি) কে যারা সমন্বয় করতে পারে, তারাই বিনাশ (অসম্ভূতি) দ্বারা মৃত্যুকে তরণ করে সম্ভূতির দ্বারা অমৃতকে লাভ করে। এবার যদি আমরা তাদের দেওয়া অনুবাদ অর্থাৎ সম্ভূতি মানে মূর্তিপুজাও ধরি, তবুও ১১ নং মন্ত্রে সম্ভূতি বা মূর্তিপুজা করতেই বলা হয়েছে।

    এপ্রিল ২৬, ২০২১, ১২:১৬ অপরাহ্ন
    • মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ বলেছেন,

      আলোচনায় যুক্ত হওয়ায় আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই!

      আমার রচনার কোথাও ডা. জাকির নায়েকের কোনো ভাষ্য আমি উদ্ধৃত করিনি। ঠাকুর বালক ব্রহ্মচারী এবং স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য উদ্ধৃত করেছি। আপনি কি এই দুজন ব্যক্তিত্বকে ডা. জাকির নায়েকের অনুসারী বলবেন? নিশ্চয়ই না! তাঁরা দুজনই হিন্দুধর্মের স্বীকৃত পণ্ডিত। আর তাঁরা পৃথিবী ছেড়েও গেছেন অনেক আগে।

      এপ্রিল ৩০, ২০২১, ৯:৫৪ অপরাহ্ন
  • Anonymous বলেছেন,

    ৩. গীতা অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ ২০ এ বলা হয়েছে যারা নিজেদের বিবেকবুদ্ধি হারিয়েছে, তারাই নাকি মূর্তিপুজা করে।
    জবাবঃ
    মূল মন্ত্রটি হলো জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে। লক্ষ্য করি, এখানে মূর্তিপুজার কোনো কথাই নেই, আছে দেবোপসনার কথা যেটাকে জাকির নায়েকের অনুসারীরা মূর্তিপুজা বানিয়ে ফেলেছে। আমরা জানি, গীতা হলো শ্রীকৃষ্ণের বাণী। আর একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই ঈশ্বরের পূর্ণ অবতার, অন্যান্য দেবদেবী হলেন আংশিক অবতার। তাই শ্রীকৃষ্ণ মানুষকে অন্য দেবদেবীর উপাসনা না করে তারই উপাসনা করতে বলেছেন। তাই হিন্দুদের মধ্যে ইস্কন সম্প্রদায়কে দেখা যায়, যারা শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করে। আর যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন, তারাও কিন্তু মূর্তিপুজাই করেন। কিন্তু এই দেবোপসনা যে বৃথা নয়, তা ২১ ও ২২ নং মন্ত্রেই আছে। জাকির নায়েকের অনুসারীরা ইচ্ছা করেই পরের মন্ত্রগুলো বাদ দেয় যেন তাদের মিথ্যাচার ধরা না পড়ে।
    আসুন গীতা ৭ম অধ্যায় অনুচ্ছেদ ২০,২১ ও ২২ এ কি বলা হয়েছে দেখে নিই।

    কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ।
    তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া।।২০।।
    অনুবাদঃ জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।

    যো যো যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
    তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্।।২১।।
    অনুবাদঃ পরমাত্মরূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।

    স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
    লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।২২।।
    অনুবাদঃ সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।

    এপ্রিল ২৬, ২০২১, ১২:১৬ অপরাহ্ন
  • Anonymous বলেছেন,

    ৪. আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যাচার হলো গীতা অধ্যায় ১০ স্তব ৩
    [ তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারা উপদেবতার উপাসনাকরে ,তাই তারা সত্যিকার স্রস্টার উপাসনা করে না।]
    জবাবঃ
    আমরা দেখবো আসলে গীতা অধ্যায় ১০ স্তব ৩ এ কি বলা হয়েছে
    যো মামজমনাদিং চ বেত্তি লোকমহেশ্বরম্।
    অসংমূঢ়ঃ স মর্ত্যেষু সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।।৩।।
    অনুবাদঃ যিনি আমাকে জন্মরহিত, অনাদি ও সমস্ত গ্রহলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, তিনিই কেবল মানুষদের মধ্যে মোহশূন্য হয়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন।

    ৫. ভূয়া, বানোয়াট তথ্যঃ
    বেদের ব্রহ্ম সুত্র তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তার মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই ।
    জবাবঃ
    ব্রহ্ম সুত্র বেদের নয়।ব্রহ্ম সুত্র উপনিষদ দর্শনের ব্যাখ্যা।

    ৬. ভূয়া,মিথ্যা তথ্যঃ
    “সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋকবেদ২ঃ৪৫ঃ১৬)
    জবাবঃ
    ঋগ্বেদের ২য় মন্ডলে আছেই ৪৩টা সূক্ত।সেখানে ৪৫সূক্তেরসূক্তের ১৬নং ঋক কোথা থেকে আসলো??

    ৭. ভূয়া ব্যাখ্যাঃ
    “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ১ঃ২ঃ৩) ।
    জবাবঃ
    ঋগ্বেদের ১ম মন্ডলের ২য় সূক্তের ৩য় ঋকে গিয়ে পাওয়া গেলো এই মন্ত্রটি,

    ঋষি,মধুচ্ছন্দা।ছন্দ,গায়েত্রী।
    বয়ো তব প্রপৃঞ্চতী ধেনা জিগাতী দাশুষে।উরুচী সোমপীতয়ে।।(ঋগ্বেদ ১/২/৩)?
    অর্থঃ
    হে বায়ু, তোমার সোমগুণ প্রকাশক বাক্য সোম পানর্থে হব্যদাতা যজমানের নিকট আসছে,অনেকের নিকট আসছে।
    *সোমরস-এক ধরণের লতার রস,যা ঘৃতের মত দেবতাদের নিকট প্রিয় পানীয়।

    ৮. মিথ্যা তথ্যঃ
    “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ১০ঃ১২১ঃ৩) ।জবাবঃ
    ঋগ্বেদের ১০ম মন্ডলের ১২১সূক্তের ৩য় ঋকে গিয়ে পাওয়া যায় এই মন্ত্রটি,

    ঋষি-হিরণ্যগর্ভ। ছন্দ-ত্রিষ্টুপ্।
    যঃ প্রাণতো নিমিষতো মহিত্বৈক ইদ্রজা জগতো বভূব।
    য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।।(ঋগ্বেদ,১০/১২১/৩)?
    অর্থঃ
    যিনি নিজ মহিমা দ্বারা যাবতীয় দর্শননেন্দ্রিয়সম্পন্ন গতিশক্তিযুক্ত জীবদের অদ্বিতীয় রাজা হয়েছেন,যিনি এ সকল দ্বিপদ চতুষ্পদের প্রভু।আমরা উপসনায় কি নৈবেদ্য দেবো?

    এপ্রিল ২৬, ২০২১, ১২:১৬ অপরাহ্ন

মন্তব্য করুন