মাওলানা মুহাম্মাদ কালীম সিদ্দিকী ।।
পৃথিবীতে আসার পর একজন মানুষের জন্য যে সত্যকে জানা ও মানা জরুরি এবং যা তার সবচে বড় দায়িত্ব, ভালোবাসাপূর্ণ সে কথাই আমি আপনাকে শোনাতে চাই।
জগতের সবচে বড় সত্য
জগতের সবচে বড় সত্য হলো – এর একজন মালিক আছেন। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা। পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। তিনি কেবল এবং কেবলই একজন। সত্ত্বা, গুণাবলী ও ক্ষমতায় তিনি এক ও অদ্বিতীয়। পৃথিবীর সৃষ্টি, পরিচালনা, জন্মমৃত্যু – কোনকিছুতে তাঁর অংশীদার নেই। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি সবকিছু শোনেন। সবকিছু দেখেন। সারা বিশ্বে একটি পাতাও তাঁর ইঙ্গিত ছাড়া নড়ে না। প্রতিটি মানুষের আত্মা এর সাক্ষ্য দেয়। সে যেকোন ধর্মের অনুসারী হোক না কেন। মূর্তিপূজারীই হোক না কেন। অন্তরের গহীনে সে এই বিশ্বাসই পোষণ করে – সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, প্রকৃত মালিক ও প্রভু তো কেবল তিনি একজনই।
মানুষের বিবেক একথাই সাক্ষ্য দেয় যে সারা বিশ্বের মালিক একজনই। এক স্কুলে দু’জন হেডমাস্টার থাকলে স্কুল চলতে পারে না। এক দেশের দু’জন রাষ্ট্রপ্রধান হলে দেশ চলতে পারে না। তাহলে এত বিশাল সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনা একাধিক খোদা বা মালিকের অধীনে কিভাবে চলতে পারে? পৃথিবীর পরিচালক, নিয়ন্ত্রক একাধিক সত্ত্বা কিভাবে হতে পারেন?
একটি প্রমাণ
মহাগ্রন্থ কুরআন সেই মালিকের বাণী। আল্লাহর বাণী। কুরআন পৃথিবীর কাছে তাঁর সত্যতা প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ করছে। আল্লাহ বলেন, “আমি আমার বান্দার উপর যা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমাদের সন্দেহ থাকলে (কুরআন মালিকের সত্য বাণী নয় মনে করলে) অনুরূপ একটি সূরা (কুরআনের অংশবিশেষ) রচনা করে আনো। প্রয়োজনে এ’কাজে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সহযোগীদের ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” (সূরা বাকারা, ২ :২২)
চৌদ্দশ বছর ধরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, জ্ঞানী, গুণী, গবেষক, বুদ্ধিজীবী কেউ সক্ষম হয়নি। মাথা নত করে দিয়েছে। বাস্তবে আল্লাহর এই চ্যালেঞ্জের জবাব কেউ দিতে পারেনি এবং পারবেও না।
এই পবিত্র গ্রন্থে মহান স্রষ্টা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়ার জন্য অনেক প্রমাণ দিয়েছেন। এমনই একটি প্রমাণ হলো – “যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া একাধিক উপাস্য থাকতো, তাহলে এ দু’য়ের মাঝে ভয়ানক গোলমাল ও বিপর্যয় সৃষ্টি হতো।” (সূরা আম্বিয়া, ২১ : ২২)
পরিষ্কার কথা। যদি একের বাইরে কয়েকজন শাসক ও মালিক হতো, তাহলে ঝগড়া হতো। একজন বলতো : ছয় মাসে দিন হবে, অপরজন বলতো : তিন মাসে হবে। একজন বলতো : সূর্য আজ পশ্চিমে উঠবে, অপরজন বলতো : পূর্ব দিক থেকে উঠবে। যদি বাস্তবেই দেবদেবীদের কোনো ক্ষমতা থাকতো এবং তারা আল্লাহর কাজে অংশীদার হতো, তাহলে কখনও এমন হতো যে একজন পূজা-অর্চনা করে বৃষ্টির দেবতা থেকে আবেদন মঞ্জুর করিয়ে নিলো। পক্ষান্তরে বড় মালিক আদেশ দিলো, এখন বৃষ্টি হবে না। এমতাবস্থায় নীচের জন হরতাল ডেকে বসলো। দেখা গেল লোকেরা সূর্য ওঠার অপেক্ষায় বসে আছে, কিন্তু সূর্য উঠছে না। পরে জানা গেল যে, সূর্য দেবতা হরতাল দিয়েছে।
সত্য সাক্ষ্য
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু এই সত্য সাক্ষ্য দিচ্ছে, সুশৃঙ্খলভাবে চলতে থাকা এ বিশ্বের নিয়মতান্ত্রিকতা সাক্ষ্য দিচ্ছে – বিশ্বের স্রষ্টা ও মালিক একজন। শুধুই একজন। তিনি যখন যা চান, করতে পারেন। তাঁকে চিন্তা ও কল্পনায় বাঁধা যায় না। তাঁর ছবি আঁকা যায় না। এ মালিকই মানুষের কল্যাণে এবং তার সেবায় সারা বিশ্ব তৈরি করেছেন। সূর্য মানুষের সেবক। বাতাস মানুষের সেবক। এ পৃথিবীও মানুষের সেবক। আগুন, পানি, প্রাণী ও নিষ্প্রাণ – পৃথিবীর সকল বস্তুই মানুষের সেবার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আর স্রষ্টা মানুষকে তাঁর উপাসনা ও হুকুম মানার জন্য বান্দা ও দাস হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। সে যেন পৃথিবীতে তার সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে। তার মালিক ও প্রভু যেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।
ইনসাফের কথা হলো – সৃষ্টিকর্তা, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা, অন্নদাতা এবং জীবনের সকল প্রয়োজন পূরণকর্তা যখন তিনি একাই, তাহলে প্রকৃত মানুষের কর্তব্য হলো তার জীবন এবং জীবনের সাথে জুড়ে থাকা সকল বিষয়ে মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর অনুগত হয়ে পূর্ণ করা। যদি কোনো মানুষ এই অদ্বিতীয় মালিকের হুকুম অমান্য করে জীবন যাপন করতে থাকে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে মানুষ হওয়ারই যোগ্য নয়।
অনুবাদ : দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ