কাশফিহা খন্দকার ।।
খৎনা করা ইসলামে ফরজ বা বাধ্যতামূলক নয়। এটি একটি সুন্নাত। তাছাড়া আমরা জানি পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ! পবিত্রতা ছাড়া ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। যেকোন ইবাদতের প্রথম শর্ত পবিত্রতা! আর এই পবিত্রতার পথে বাধা সৃষ্টি করে বাড়তি ঐ চামড়াটুকু! এই চামড়াটুকু থাকা অবস্থায় পবিত্র হওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কেননা এতে প্রস্রাব ও অন্যান্য নাপাকি লেগে থাকে, যা পরিষ্কার করা সময়সাপেক্ষ! আর এক্ষেত্রে পবিত্র হতে পানি অপরিহার্য! অথচ আমরা জানি সর্বাবস্থায় পানি পাওয়া সম্ভব নয়!
এজন্যই সহজে পবিত্রতা অর্জনের জন্য মুসলমানরা খৎনা করে থাকে! এছাড়া খৎনার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা যে কত, তার তালিকা দিয়ে শেষ করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি খৎনা না করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে, তবে তাকে ইসলাম খৎনা করতে বাধ্য করে না! এখন প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু পবিত্রতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে, সেহেতু জন্ম থেকে মাওলা এই বাড়তি চামড়া দিলেন কেন?
আচ্ছা কলাতো সবাই খেয়েছেন! কলার উপরের আবরণটি কেন থাকে? উত্তর হলো, কলাকে নিরাপদ রাখার জন্য। তা নাহলে কলা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আমরা জানি শিশুদের ত্বক অত্যন্ত নাজুক ও কোমল থাকে! ফলে এইসময় সামান্য আঁচড়ই তাদের ত্বকে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আর বিশেষ সেই অঙ্গটিতো আরো নাজুক থাকে। এসময় যদি এটি উন্মুক্ত থাকতো, তবে খুব সহজে সামান্য কাপড়ের ঘষাতেই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত!
ঠিক এজন্যই মাওলা এই বাড়তি চামড়া দিয়ে একে ঢেকে রাখেন। যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়! তাহলে পরে কেন কাটতে বলেন? পাক-পবিত্রতার মাস’আলাটি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যখন সে শরীয়ত অনুযায়ী ইবাদত করার বয়সে পৌঁছাবে, তখনি পবিত্রতার প্রশ্নটি সামনে আসে। আর তখনি খৎনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেসময় অঙ্গটি আর নাজুক থাকে না আগের মতো, যখন সে শিশু ছিল। আর তাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না! সুবহানাল্লাহ!! এটাই মাওলার বিশেষত্ব! নিশ্চয়ই তিনি সকল কারিগরের চেয়ে উত্তম কারিগর।
খৎনা করাকে স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে হাদিসে। চুল, নখ ইত্যাদি কাটার মতোই স্বাভাবিক বিষয়। এর দ্বারা কোনো বিকৃতি ঘটে না। বিকৃতি তখনই বলা হবে, যখন সেটা জীবের স্বাভাবিক কর্মকে বাধাগ্রস্ত করবে। কিন্তু খৎনা করলে সন্তান জন্মদানে কোনো অসুবিধাই হয় না।
জন্মের পর সন্তানের নাড়ি কাটাকে কি আপনি বিকৃতি বলতে পারেন? এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। ইউরোপ-আমেরিকার মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোর হসপিটালে ছেলে সন্তান জন্ম নিলে তাদের উপযুক্ত বয়স হলেই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে খৎনা করিয়ে দেয়া হয়৷ এটি পুরুষদের জন্য একটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি (Basic Health Rule)৷ খৎনা না করালে পুরুষদের গোপনাঙ্গের ওই চামড়ার ভিতরে ময়লা জমতে জমতে ইনফেকশন, ক্যান্সার, যৌন সমস্যা, সন্তান না হওয়া, গনরিয়া, সিফিলিসের মতো মারাত্মক বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই নিজের জীবন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ও সুস্থ থাকতে পুরুষদের খৎনা করা আবশ্যক৷
খৎনা করা ইসলামে সুন্নাত, কিন্তু ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মে বাধ্যতামূলক (Genesis17:14, Luke 2:21)। এছাড়া হিন্দুধর্মেও খৎনার বিধান পাওয়া যায়। (ভবিষ্যপুরাণ, নবভারত পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৩৭৯)
খৎনা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি’র একটি সংবাদ পড়ুন
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এই সময়-এর সংবাদটি পড়ুন
21,812 total views, 35 views today
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
মন্তব্য (০ টি)