ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত আচেহ প্রদেশ। সেখানকার লোকঙ্গা জেলার লামপুক সমুদ্র সৈকতের ধারে দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। নাম রহমতুল্লাহ মসজিদ। শুভ্রতার আবিরমাখা এই মসজিদ পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাতোলিয়া নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটা জানা গেছে।
মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৭ সালে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মসজিদটি প্রথম আলোচনায় আসে ১৫ বছর আগে। ২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ভয়াবহ সুনামিকে মোকাবেলা করে।
ভারত মহাসাগরে ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামি আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয়া থেকে ওশেনিয়ার অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত আঘাত হানে। এতে ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বলে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সূত্রে জানা যায়।
সুনামিটি বয়ে যায় ৩০ মিটার (৯৮ ফুট) উচ্চতা। এর স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় লামপুকের সব স্থাপনা। পরবর্তীকালে আচেহ প্রাদেশিক সরকার জানায়, স্থানটিতে ওই সময় বাস করা ৬ হাজার অধিবাসীর মধ্যে মাত্র ৭০০ জন জীবিত ছিলেন।
স্রোতের করালগ্রাসে আশপাশের সবকিছু ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। কিন্তু সমুদ্র সৈকতের খুব কাছে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও মসজিদটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। দেখা গেছে, সুনামিতে ১৬শ বর্গ মিটার আয়তনের মসজিদটির পিলারের সামান্য ক্ষয় ছাড়া আর বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
সুনামি থেকে বেঁচে যাওয়া মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা ভাবলে আঁতকে উঠেন। ইমাম সুলাইমান মুহাম্মদ আমিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, আল্লাহর রহমত হিসেবে মসজিদটি তার নামেরই স্বার্থকতা প্রকাশ করেছে। ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল মসজিদের গম্বুজের থেকেও উঁচু।
ক্ষিপ্র স্রোতের প্রবল ধাক্কায় ইমাম আমিন ভেসে গিয়েছিলেন তিন কিলোমিটার। পরে ফিরে এসে মসজিদকে অক্ষত অবস্থায় দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান। বেঁচে থাকা অধিবাসীদের নিয়ে তখন তিনি মসজিদে শোকরিয়ার নামাজ আদায় করেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পেরে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। যদিও কিছু পিলারের অংশ ভেঙে পড়েছিল।
২০০৬ সালে তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় নতুনভাবে মসজিদটির সংস্কারকাজ করা হয়। পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকায় ৭০০টি নতুন ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়। তুর্কি সহায়তায় পুনর্নিমাণের কারণে স্থানটি ‘তুর্কি গ্রাম’ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে খ্যাতি লাভ করেছে।
সুনামির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পিলারগুলোকে অক্ষত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সেসময়ের ভেঙে যাওয়া জানালা, কার্পেট ও জায়নামাজগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ভেঙে যাওয়া এক পিলারে ‘সুনামির কথা ভুলে যেও না’ শীর্ষক সাইনবোর্ড রাখা হয়েছে। সুনামির দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিতে এবং সচেতনতা বাড়াতেই তাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন।
সৌজন্যে : BANGLANEWS24.COM
26,770 total views, 11 views today
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
মন্তব্য (০ টি)